Last Updated on January 13, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো
ভারতীয় সংস্কৃতির মধ্যে মকর সংক্রান্তি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ন উৎসব। এটি শুধু একটি হিন্দু ধর্মীয় উৎসবই নয়, বরং ভারতের কৃষি ঐতিহ্য, আকাশগঙ্গার পরিবর্তন এবং সংস্কৃতির একটি উদযাপন। মকর সংক্রান্তি সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা শীতের solstice শেষ হওয়ার পর কৃষি জীবনে নতুন আশা এবং ধন্যবাদ জানানোর সময়। এটি নতুন বছরের সূচনা হিসেবে উদযাপিত হয় এবং কৃষকরা তাদের ফসলের ফলাফল হিসেবে বিশেষভাবে এই দিনটিকে গুরুত্ব দেন।
মকর সংক্রান্তির গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মকর সংক্রান্তি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি এক ধরনের কৃষির উৎসবও। ভারতের অধিকাংশ অংশে কৃষি জীবনের সঙ্গে মকর সংক্রান্তির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। বিশেষত ধান, চিনি, তিল, এবং সয়াবিনের মতো ফসলগুলির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই দিনটি কৃষকদের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন, যেখানে তারা তাদের ফসলের জন্য পরিতৃপ্তি এবং আশীর্বাদ কামনা করেন।
মকর সংক্রান্তি সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের সূচনাকে চিহ্নিত করে, যা উত্তরায়ণের প্রথম দিন। উত্তরায়ণ হল এমন একটি সময়কাল, যা বৈজ্ঞানিকভাবে পবিত্র মনে করা হয় এবং এটি শুভ এবং শুভ্র শক্তির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। এই সময় সূর্য উত্তরে চলে আসে, ফলে দিন দীর্ঘ হতে শুরু করে, যা শীতের পরবর্তী উষ্ণতা আনে এবং নতুন জীবন ও নতুন শুরুর প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
বিভিন্ন অঞ্চলে মকর সংক্রান্তির উদযাপন
মকর সংক্রান্তি ভারতে নানা অঞ্চলে নানা নামে এবং নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়। ভারতে এই উৎসবের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং খাদ্যাদির জন্য পরিচিত।
- পাঞ্জাব: পাঞ্জাবে, মকর সংক্রান্তি উৎসবকে লোহরি নামে জানানো হয়, যেখানে বিশেষত খিচড়ি, তিল এবং গুড়ের পুলি তৈরি করা হয়।
- তামিলনাড়ু: তামিলনাড়ুতে, মকর সংক্রান্তিকে পংগল নামে উদযাপিত হয়। এখানে ঘর পরিষ্কার করে নতুন ফসলের গুডি তৈরি হয় এবং দেবতার কাছে পূজা অর্চনা করা হয়।
- গুজরাট ও রাজস্থান: গুজরাট ও রাজস্থানে উটবাজি বা ঘুড়ি উড়ানোর এক বিশেষ উৎসব হয়ে থাকে, যেখানে আকাশে নানা রঙের ঘুড়ি ভাসে। এই উড়ানটি আকাশের দিকে উড়ে যাওয়ার সিম্বল, যা স্বাধীনতা এবং আনন্দের প্রতীক।
- উত্তরপ্রদেশ ও বিহার: মকর সংক্রান্তি এখানেও খিচড়ি উৎসব নামে পরিচিত। এখানে স্নান এবং দান-পুণ্য করার বিশেষ আয়োজন থাকে।
পুণ্যস্নান এবং দানের গুরুত্ব
মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে ভারতের বহু পবিত্র নদী যেমন গঙ্গা, যমুনা, গোধাবরি, নর্মদা, এবং তুরীয শুদ্ধির জন্য এক বিশেষ গুরুত্ব পায়। এই সময় হাজার হাজার মানুষ নদীতে স্নান করতে যান, যা তাদের সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি এবং পুণ্য লাভের জন্য বিশ্বাস করা হয়। এ ছাড়া দানের মাধ্যমে তারা অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন, যা সামাজিক সংহতি এবং সম্প্রদায়ের শক্তিকে প্রবর্তিত করে।
মকর সংক্রান্তি এবং সংস্কৃতি:
মকর সংক্রান্তি শুধুমাত্র একটি কৃষি উৎসব নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধারও প্রতীক। নানা আঞ্চলিক রীতিনীতি, মিষ্টি খাবার, এবং উৎসবের আনন্দে, এই দিনটি সমগ্র জাতির জন্য এক অমূল্য উপহার। গুড়, তিল, তেল, খিচড়ি, পুলি, এবং বিশেষ মিষ্টি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে শীতের শেষে আনন্দের মুহূর্ত তুলে ধরা হয়। এছাড়াও এই দিনটি শুভ কাজ শুরু করার জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত বলে মনে করা হয়, যা ভারতীয় সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতিরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংক্ষেপে: মকর সংক্রান্তির ঐতিহ্য
মকর সংক্রান্তি হল এমন একটি উৎসব যা শুধুমাত্র কৃষির সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং এটি ভারতের ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক প্রতিচ্ছবি। এই উৎসবটি সকলকে একত্রিত করে, যে কোন ধর্ম এবং জাতি থেকে আসে, তাদের মধ্যে একতা, আনন্দ এবং সম্প্রদায়ের অনুভূতি সৃষ্টি করে। এটি দেশের কৃষকদের কৃতজ্ঞতা জানানোর এবং ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধির জন্য আশীর্বাদ কামনা করার এক মহান উপলক্ষ্য।