Last Updated on January 20, 2025 by কর্মসংস্থান ব্যুরো
ভারত একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, যেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি দুজনই সরকারের প্রধান হলেও তাদের ভূমিকা, ক্ষমতা এবং দায়িত্বের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের সাংবিধানিক প্রধান, যিনি কার্যত একটি সামান্য অংশে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, আর প্রধানমন্ত্রী হলেন কার্যনির্বাহী প্রধান, যিনি সরকারের শাসন ও নীতি গ্রহণের দায়িত্ব পালন করেন। এই প্রবন্ধে, আমরা ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী এর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ভারতের রাষ্ট্রপতি: ভূমিকা, ক্ষমতা ও নির্বাচন প্রক্রিয়া
ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সাংবিধানিক প্রধান। তবে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত এবং প্রধানত সাংবিধানিক ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপতি দেশের আইন, সংবিধান এবং জনগণের অধিকারের রক্ষক। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন ইলেক্টোরাল কলেজ এর মাধ্যমে হয়, যেখানে পার্লামেন্ট এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচিত সদস্যরা ভোট দেন। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছর, এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ করেন।
রাষ্ট্রপতির প্রধান ক্ষমতা গুলি হল:
- আইন পাশ করা: রাষ্ট্রপতি সংসদের মাধ্যমে পাশ হওয়া সমস্ত আইনকে স্বীকৃতি দেন।
- কী কর্মকর্তাদের নিয়োগ: রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেন, যেমন রাজ্যপাল, প্রধান বিচারপতি, ইত্যাদি।
- আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সম্পর্ক: রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং সম্পর্ক স্থাপন করেন তবে এগুলি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী: ভূমিকা, ক্ষমতা ও নির্বাচন প্রক্রিয়া
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের কার্যনির্বাহী প্রধান এবং ইউনিয়ন কেবিনেটের প্রধান। প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এবং সংসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। প্রধানমন্ত্রী দেশের নীতির রূপায়ণ এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যাপক এবং তিনি পার্লামেন্টের শীর্ষ নেতা হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী সাধারণত দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতা হন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রধান ক্ষমতা গুলি হল:
- কার্যনির্বাহী ক্ষমতা: প্রধানমন্ত্রী সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ দেন।
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: প্রধানমন্ত্রী দেশের বিদেশ নীতির প্রধান রূপকার এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।
- নতুন আইন প্রণয়ন: প্রধানমন্ত্রী নতুন আইন প্রণয়ন ও সংসদে তা পাস করার কাজ করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এর মধ্যে পার্থক্য
নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী এর মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করা হলো:
দিক | রাষ্ট্রপতি | প্রধানমন্ত্রী |
---|---|---|
পদ | নির্বাহী বিভাগের সাংবিধানিক প্রধান | ইউনিয়ন মন্ত্রিসভার প্রধান |
নির্বাচন | ইলেক্টোরাল কলেজ সিস্টেম দ্বারা নির্বাচিত | রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিয়োগ, সাধারণত বড় দলের নেতা |
মেয়াদ | ৫ বছর | নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই, তবে নির্বাচনে জয়ী হলে পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন |
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক | বিদেশ নীতিতে কোনো প্রধান ভূমিকা নেই | বিদেশ নীতি নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব |
আইনগত ক্ষমতা | সংসদ দ্বারা পাশ হওয়া সমস্ত আইন অনুমোদন করেন | সংসদে নতুন আইন প্রস্তাব এবং তার বাস্তবায়ন |
কার্যনির্বাহী ক্ষমতা | মাত্র nominal executive powers | substantial executive powers |
বিচারিক ক্ষমতা | প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিচারকদের নিয়োগ | বিচারক নিয়োগে কোনো ভূমিকা নেই |
নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং শপথগ্রহণ
ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ইলেক্টোরাল কলেজ এর মাধ্যমে, যেখানে সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যরা ভোট দেন। রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুতর এবং সাংবিধানিক নিয়মাবলী মেনে করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী সাধারণত দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতা হন, যাকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে, তিনি শপথ গ্রহণ করেন এবং সরকার পরিচালনার জন্য একটি দল গঠন করেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন দুটি আলাদা কিন্তু একে অপরের পরিপূরক পদ, যারা ভারত সরকারের কার্যনির্বাহী কাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং দায়িত্ব সীমিত হলেও, তিনি সংবিধান ও আইন রক্ষার দায়িত্বে আছেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী ভারতের সরকারের কার্যনির্বাহী প্রধান এবং তিনি দেশের নীতির রূপায়ণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।